ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়
ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়। ফাইভার সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে এখানে একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রোজেক্ট পাওয়ার জন্য এই প্লাটফর্ম একটি অসাধারণ জায়গা। এখানে বায়ার এবং সেলারদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ফিচার বিদ্যমান। অনলাইনে ইনকাম করার জন্য যে যে কাজ অনলাইনে আছে তার প্রায় সব বিষয়েই ফাইভারে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। চলুন ফাইভার কি, কীভাবে কাজ করে এবং এখানে ক্যারিয়ার গড়তে হলে কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে আসি।
ফাইভার একটি ইজরাইলি মাল্টিন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপি ফাইভার রিলিজ করা হয়। এর সদর দপ্তর ইজরাইলের তেল আবিবে। Micha Kaufman এবং Shai Wenninger একটি দ্বিমুখী ডিজিটাল সার্ভিস বেচাকেনা করার জায়গা হিসেবে Fiverr প্রতিষ্ঠা করেন।
ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়
ফাইভারে কিভাবে কাজ করে?
জানা যাক, ফাইভার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। ইংলিশ বাদেও ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, পর্তুগিজ, ডাচ ভাষায় এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায়। এতে বিশ্বব্যাপি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয়।
ফাইভার সাধারণত সেলার এবং বায়ার এই দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করে। অর্থাৎ এখানে আপনি কাজ করতে গেলে সেলার অ্যাকাউন্ট লাগবে এবং কাজ করিয়ে নিতে চাইলে বায়ার প্রোফাইল ইউজ করতে হবে।
ফাইভার ফাউন্ডারদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একে একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে তৈরি করা। যেখানে ইউজার রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে। সেই অ্যাকাউন্ট ইউজ করে বায়ার এবং সেলার সার্ভিস ক্রয়-বিক্রয় করবে।
বায়ার অ্যাকাউন্ট সেলার অ্যাকাউন্ট থেকে একটু আলাদা হয়। বায়ার প্রোফাইল ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল সার্ভিস ক্রয় করার জন্য ক্লায়েন্টের যে যে টুলস বা সার্চ করার ক্ষমতা থাকতে হয় তা নিশ্চিত করে। যেমন, আমরা যখন ফাইভারে অ্যাকাউন্ট করি তখন তারা আমাদের সেলার এবং বায়ার এর মধ্যে কোন বিষয়ে অ্যাকাউন্ট করবো তা নির্বাচন করতে বলে।
এই পদ্ধতিতে Fiverr বুজতে পারে আমাদের কীভাবে অ্যালগরিদম এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে যাতে বেষ্ট সার্ভিস পেতে পারি। অন্য দিকে সেলার প্রোফাইলের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিজের অভিজ্ঞতা এবং কাজের প্রমাণ দিয়ে একটি গিগ তৈরি করা। এই গিগে যে যে তথ্য থাকে তা বায়ারের সামনে প্রদর্শিত হয়। এতে বায়ার তার কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে বের করতে পারে। ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়।
ফাইভার সেলার প্রোফাইলের মাধ্যমে বায়ারকে ফ্রিল্যান্সার সরবরাহ করে
মোটকথা, ফাইভার সেলার প্রোফাইলের মাধ্যমে বায়ারকে ফ্রিল্যান্সার সরবরাহ করে। আমরা আগেই জেনেছি ফাইভার একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম যেখানে সব ধরনের ফ্রিলান্সিং কাজ পাওয়া যায়। তো এই প্লাটফর্ম কাজ করে গিগ ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে।
অর্থাৎ এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর ফ্রিল্যান্সারদের গিগ তৈরি করতে হয়। ক্যাটাগরি ভিত্তিক এই গিগ গুলো ফ্রিল্যান্সারের অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ, পোর্টফোলিও ইত্যাদি দিয়ে তৈরি থাকে। সেখানে একটি বেসিক প্রাইস দিতে হয়। বেসিক প্রাইসের সাথে সেখানে কাস্টম প্রাইসিং এর মাধ্যমে সার্ভিস নির্ভর দাম নির্বাচন করা যায়।
ধরুন আপনি একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। এখন এই সার্ভিসের জন্য আপনার চার্জ করতে হবে কম পক্ষে ৩০০ ডলার। আপনি সরাসরি বেসিক প্রাইস হিসেবে এটি দিলে বায়ার আপনার সার্ভিস ক্রয় করবে না। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে কাস্টম ভাবে এই বিশেষ সার্ভিসের জন্য প্রাইস নির্ধারণ করে দিতে হবে।
একজন বায়ার যখন গিগ দেখে অর্ডার করবে তখন একটি অর্ডার পেজ তৈরি হয়ে উক্ত কাজের সকল কমিউনিকেশন সেখানে হবে। ফাইভারের কিছু নিয়ম কানুন বা TOS আছে যা ভঙ্গ করলে অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়ে যাবে। বিশেষ করে এসএমএসে কখনই নিজের পার্সোনাল কন্ট্রাক্ট ডিটেইলস দেওয়া যাবে না।
তো অর্ডার পাওয়ার পর তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হয় না হলে তা অর্ডার কমপ্লিট রেট কমিয়ে দিবে। এতে গিগ র্যাঙ্কিং হারাবে যা পরবর্তী অর্ডার পেতে বাঁধা সৃষ্টি করবে। কাজ জমা দেওয়ার পর বায়ারের হাতে তিন দিন সময় থাকে ডেলিভারি রিসিভ করার জন্য। এই তিন দিনের মধ্যে রিসিভ না করলে তা অটোমেটিক রিসিভ হয়ে যাবে।
রিভিশন রিকোয়েস্ট
বায়ার চাইলে পুনরায় রিভিশন রিকোয়েস্ট করতে পারবে অথবা তার যদি ইতিমধ্যে কাজ পছন্দ হয়ে যায় তবে রিভিউ দিয়ে অর্ডার শেষ করতে পারবে। এই রিভিউ সেলারের গিগ, প্রোফাইল ইত্যাদি র্যাঙ্কিং করতে এবং তাকে নতুন কাজ পেতে সাহায্য করে। কারণ নতুন বায়ার তার প্রোফাইলে পজেটিভ রিভিউ দেখেই অর্ডার করতে আগ্রহী হবে।
কাজ কমপ্লিট হওয়ার পর থেকে ঠিক ১৪ দিন পর সেলারের প্রোফাইলে পেমেন্ট জমা হয়। ফাইভারে সর্বনিম্ন উইথড্র করার আমাউন্ট হচ্ছে ১০ ডলার যা শুধু পেপাল দিয়ে হয়। এছাড়া পেওনিয়ার এবং ব্যাংক ট্র্যান্সফার করার জন্য কমপক্ষে ২০ ডলার আমাউন্ট অ্যাকাউন্টে থাকতে হবে।
ফাইভারে কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন?
ফাইভারে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নিচের ধাপ গুলো ফলো করলে সহজেই সফলতা পাবেন।
প্রোফাইল কমপ্লিট
ফাইভারে সফলতা পেতে হলে আপনার প্রোফাইল ১০০% কমপ্লিট করতে হবে। বিশেষ করে আপনার প্রোফাইল পিকচার প্রফেশনাল মানের হতে হবে। নামের নিচে যে ট্যাগলাইন থাকে সেখানে আপনার যে কাজে অভিজ্ঞতা আছে বা যা নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক তা সাজিয়ে লিখতে হবে। এতে বায়ার আপনার নাম আর ছবি দেখেই একটি সুন্দর এবং পজেটিভ ধারণা পাবে।
তারপর ডেসক্রিপশন বক্সে আপনার নিজের সম্পর্কে এবং কি কি সার্ভিস প্রোভাইড করবেন সে সম্পর্কে অনেক গুছিয়ে লিখতে হবে যা দেখে বায়ার আপনার কাজের বিষয়ে ধারণা লাভ করবে।
স্কিল টেস্ট
প্রোফাইল কমপ্লিট করার পর আপনার কাজের সেক্টরের উপরে যে সকল টেস্ট বিদ্যমান তা কমপ্লিট করতে হবে। যদিও এটি বাধ্যগত নয় তবে প্রোফাইল র্যাঙ্কিং এবং অভিজ্ঞতা বুঝানোর জন্য স্কিল টেস্টের কোন বিকল্প নেই।
গিগ তৈরি
আপনার প্রোফাইল প্রফেশনাল ভাবে সাজানোর পর সার্ভিস দেয়ার জন্য গিগ তৈরি করতে হবে। ফাইভারে গিগ শব্দের অর্থ কাজের বিবরণ। অর্থাৎ একটি গিগের কয়েকটি ধাপ থাকে যেখানে ক্যাটাগরি, সার্ভিস ডেসক্রিপশন, ইমেজ, প্রাইস ইত্যাদি থাকে।
মনে রাখা জরুরী যে, যার গিগ দেখতে যত সুন্দর হবে তার গিগে ক্লিক এবং ইম্প্রেশন বেশি হবে। গিগে বেশি বেশি বায়ার আকর্ষণ করার জন্য এর টাইটেল হতে হবে সুন্দর এবং সাবলীল। সব সময় কম কমপিটিশন থাকে এমন বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
এতে অল্প সময়ে গিগ র্যাঙ্ক করবে এবং সেল বাড়বে। গিগে প্রাইসিং অনেক ভেবে চিন্তে করতে হবে। অবাস্তব প্রাইস চাইলে যেমন বায়ার অর্ডার করবে না তেমনি প্রয়োজনের থেকে কম বাজেড চাইলে দুর্বল সার্ভিস ভেবে অর্ডার করবে না। অতএব সবসময় স্বাভাবিক প্রাইসিং করতে হবে।
গিগে ক্লিক এবং ইম্প্রেশন বাড়ানোর জন্য প্রফেশনাল থাম্বনেইল দিতে হবে। থাম্বনেইল হিসেবে আপনি একটি ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও দিতে পারবেন।
গিগ মার্কেটিং
পরিশেষে গিগ মার্কেটিং হলো ফাইভারে ক্যারিয়ার গড়ার গোপন অস্ত্র। কারণ আপনি যত ভালো গিগ মার্কেটিং, বায়ার রিকোয়েস্ট, গিগ প্রমোট করতে পারবেন তত বেশি অর্ডার পাবেন। এ কারণে আপনাকে এদিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
ফাইভারকে সঠিক পদ্ধতিতে কাজে লাগাতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং করার মেধা দিয়ে প্রতি মাসে অনেক ভালো পরিমাণ ইনকাম করা সম্ভব। টবে এখানে আমাদের যা জানার কারণে আমরা সফল হতে পারি না। আসা করি এই লেখা পরে আপনি ফাইভার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন যা এই জার্নিতে আপনাকে সাহায্য করবে। ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়।
ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়
ফাইবার (Fiverr) হলো একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য পেশাদার ফ্রিল্যান্সাররা সেবা প্রদান করেন। এখানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কাজ করা যায়, যেমন:
১. গ্রাফিক্স ও ডিজাইন
- লোগো ডিজাইন
- ব্র্যান্ডিং
- ওয়েবসাইট ডিজাইন
- ইলাস্ট্রেশন
- বিজনেস কার্ড ডিজাইন
- সোশ্যাল মিডিয়া ডিজাইন
- প্রেজেন্টেশন ডিজাইন
২. ডিজিটাল মার্কেটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Facebook, Instagram, Twitter)
- এসইও (SEO)
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন
- ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
- ভিডিও মার্কেটিং
৩. লিখালিখি ও অনুবাদ
- কন্টেন্ট রাইটিং
- ব্লগ আর্টিকেল
- কপিরাইটিং
- স্ক্রিপ্ট রাইটিং
- অনুবাদ (Translation)
- টেকনিক্যাল রাইটিং
- প্রুফরিডিং ও এডিটিং
৪. ভিডিও ও অ্যানিমেশন
- ভিডিও এডিটিং
- ২ডি/৩ডি অ্যানিমেশন
- মোশন গ্রাফিক্স
- ইউটিউব ভিডিও প্রোডাকশন
- প্রমোশনাল ভিডিও তৈরি
- প্রোডাক্ট অ্যানিমেশন
৫. মিউজিক ও অডিও
- ভয়েস ওভার
- মিউজিক প্রোডাকশন
- পডকাস্ট এডিটিং
- অডিও এডিটিং ও মিক্সিং
৬. প্রোগ্রামিং ও টেকনোলজি
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (ফ্রন্টএন্ড/ব্যাকএন্ড)
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট
- ইকমার্স ডেভেলপমেন্ট
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- সাইবার সিকিউরিটি
- ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট
৭. ব্যবসা ও পরামর্শ
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট
- মার্কেট রিসার্চ
- প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি
- ফিনান্সিয়াল কনসাল্টিং
৮. জীবনযাত্রা
- ব্যক্তিগত কোচিং
- স্বাস্থ্য ও ফিটনেস পরামর্শ
- ট্রাভেল প্ল্যানিং
- অনলাইন টিউটরিং
৯. ডেটা এন্ট্রি ও প্রশাসনিক কাজ
- ডেটা এন্ট্রি
- টাইপিং কাজ
- মাইক্রোসফ্ট এক্সেল ও ওয়ার্ড কাজ
- ইন্টারনেট রিসার্চ
ফাইবারে এই ধরনের কাজগুলো ছাড়াও আরও অনেক ক্যাটেগরিতে কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে পারেন।
ফাইভারে কি কি কাজ করা যায়